Skip to main content
 

অল্পবয়সেই চোখের 
সমস্যা চিকিৎসা কী?

 ঘরে ঘরে চশমা। এখন অল্পবয়সেই অনেকে আক্রান্ত হচ্ছে চোখের নানা সমস্যায়। সমাধান কোন পথে? জানাচ্ছেন এএসজি আই হসপিটালের কনসালটেন্ট অপথ্যালমোলজিস্ট ডাঃ কৌশিক বসু।

 অল্পবয়সিদের মধ্যে চোখের সমস্যা কি বাড়ছে?
 অল্পবয়স বলতে একদম বাচ্চা থেকে বছর ২৫ পর্যন্ত বলা যেতে পারে। প্রতিদিনের চিকিৎসা অভিজ্ঞতায় দেখছি, এখন এই বয়সের বেশিরভাগ মানুষ চোখের সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছেন। প্রায় প্রতি ঘরে ঢুকে পড়েছে চশমা। এমনকী দেড়-দুই বছর বয়সি বাচ্চাকেও চশমা পরতে হচ্ছে। আর সত্যি বলতে, কমবয়সে এত সংখ্যক মানুষের চোখের সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার কোনও নির্দিষ্ট কারণ বলা বেশ কঠিন। তবে দীর্ঘক্ষণ মোবাইল, কম্পিউটার, টিভির স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকার ফলে কিছুটা সমস্যা বেড়েছে।
 কী কী সমস্যা হয়?
 অল্পবয়সে চোখে পাওয়ার আসা, রেটিনার সমস্যা, ট্যারা চোখ, চোখে আঘাত, ইনফেকশন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। পাশাপাশি জন্মগত ছানি, গ্লকোমার মতো সমস্যাও এখন দেখা যায়। 
 চোখে পাওয়ার আসার বিষয়টা যদি একটু ভেঙে বলেন?
 এক্ষেত্রে ব্যক্তি খালি চোখে কাছের অথবা দূরের জিনিস, কিংবা কাছের এবং দূরের দু’টোর কোনওটাই দেখতে পান না। তখন সেই ব্যক্তিকে পাওয়ার দেওয়া চশমা বা লেন্স ব্যবহার করতে দেওয়া হয়। তবে এটা একদমই সহজ ব্যাখ্যা। বিষয়টির একটু গভীরে বুঝতে চোখে দেখার প্রক্রিয়াটা সম্বন্ধে সামান্য জেনে নেওয়া দরকার। 
আসলে চোখের কর্নিয়ার মধ্য দিয়ে সমান্তরালভাবে আলো গিয়ে রেটিনার ওপর পড়ে। রেটিনার সামনে থাকে কর্নিয়া ও লেন্স। আলো এই দুইয়ের মধ্য থেকে সঠিকভাবে রেটিনার উপর পড়লে আমরা দেখতে পাই। আর অপরদিকে আলো রেটিনায় সঠিকভাবে না পৌঁছালে, আমাদের দেখতে সমস্যা হয়। এখানেই আসে পাওয়ারের ভূমিকা। পাওয়ার যুক্ত কৃত্রিম লেন্স ব্যবহার করে আলোকে রেটিনার নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে দিলেই সঠিক দৃষ্টি ফেরে। 
চোখের পাওয়ার সাধারণত দু’রকমের হয়। প্লাস পাওয়ার এবং মাইনাস পাওয়ার। মাইনাস পাওয়ারে আক্রান্তের দূরের জিনিস দেখতে সমস্যা হয়। প্লাস পাওয়ার থাকা ব্যক্তিদের কাছের এবং দূরের, দুই ধরনের দৃশ্য দেখতে সমস্যা হয়।
এই সমস্যার প্রধান লক্ষণ হল অস্পষ্ট দেখা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্কুলে পড়া অবস্থাতেই এই সমস্যা দেখা দেয়। বাচ্চা ব্ল্যাকবোর্ড দেখতে পাচ্ছে না, বই একদম চোখের সামনে এনে পড়ছে, টিভির একেবারে সামনে বসে দেখছে ইত্যাদি লক্ষণ দেখলেই সতর্ক হতে হবে। পাশাপাশি মাথা ব্যথাও থাকতে পারে।
এক্ষেত্রে চিকিৎসার প্রথম ধাপে রোগীর চোখের সঠিক পাওয়ার নির্ণয় করা জরুরি। তারপর পাওয়ার অনুযায়ী চশমা পরতে হবে। দরকারে বিভিন্ন চোখের ওষুধও দেওয়া হয়।
 চশমা পরলে কি পাওয়ার চলে যায়?
 নিয়মিত চশমা ব্যবহারে পাওয়ার যাক না যাক, দৃষ্টিশক্তি ঠিক থাকবেই। তবে একদম প্রথম অবস্থা থেকে চশমা পরলে বেশকিছু ক্ষেত্রে চোখের প্লাস পাওয়ার নিজে থেকেই চলে যায়। কিন্তু মাইনাস পাওয়ার চশমা পরলেও ঠিক হয় না।
 ১৮ বছরের পর চোখের পাওয়ার বাড়ে না। এই ধারণাটি কি ঠিক?
 আসলে ১৮ বয়সের পর আমাদের শারীরিক ও চোখের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে চোখের পাওয়ারও মোটামুটি একটি জায়গায় স্থির হয়। আবার বয়সকালে চোখের ছানি পড়লে পাওয়ার বাড়ার আশঙ্কা থাকে। তাই কথাটি এক অর্থে ঠিকই। তবে কিছু ক্ষেত্রে এই বয়সের পরও পাওয়ার বাড়তেই পারে। 
 চোখে পাওয়ারের সমস্যা সমাধানে সার্জারি কতটা নির্ভরযোগ্য?
 পাওয়ারের সার্জারি বলতে মূলত ল্যাসিক ও আইসিএল সার্জারির কথা বলা হয়। এক্ষেত্রে সার্জারির মাধ্যমে চোখের ভিতরে স্থায়ীভাবে লেন্স লাগিয়ে দেওয়া হয়। এগুলি একদমই সুরক্ষিত পদ্ধতি। তবে সাধারণত চোখের বৃদ্ধি ১৮ বছরের নীচে পূর্ণ হয় না বলে, এই বয়সের নীচে এই সার্জারি করা হয় না। 
 চশমার বদলে লেন্সের ব্যবহার কতটা যুক্তিযুক্ত?
 হাল আমলের এমন ট্রেন্ড একদমই ভালো নয়। এর উপর বিভিন্ন রঙের লেন্সের প্রতি মানুষের ঝোঁক বাড়ায় অবস্থার আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এখন প্রতিটি চোখের চিকিৎসকের কাছে কনট্যাক্ট লেন্স থেকে ইনফেকশন হওয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তাই কনট্যাক্ট লেন্স পড়ার আগে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে। কনট্যাক্ট লেন্স একান্তই পরতে হলে দিনে ৮ ঘণ্টার বেশি নয়। 
 কালার ব্লাইন্ডনেস বিষয়টা কী?
 মূলত ছেলেরা এই সমস্যায় আক্রান্ত হয়। অনেকেই ভাবেন, এই রোগে আক্রান্তরা কোনও রং চিনতে পারে না। এটা ভুল ধারণা। এমন ব্যক্তিরা অনায়াসে রং চিনে নিতে পারেন। তাঁরা নির্দিষ্ট রঙের কনট্র্যাস্ট দেখে রং চেনেন। তাঁদের একসঙ্গে একাধিক রঙের মধ্যে পার্থক্য করতে সমস্যা হয়। এটি একটি জন্মগত অসুখ। আর এই রোগের কোনও চিকিৎসাও নেই। এই অসুখের কারণে বহু কাজ করার সুযোগ থাকে না। তাই এই রোগে আক্রান্ত মানুষের কেরিয়ার কাউন্সিলিং করা উচিত। 
 চোখ ট্যারা হয় কেন?
 অনেকেরই চোখের মণি বা আই বল সোজা থাকে না। এই সমস্যাকে ট্যারা চোখ বলা হয়। এক্ষেত্রে চোখের পেশি সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। ফলে চোখ বাঁকা দেখায়। এই জটিলতা এক চোখ বা দুই চোখেই হতে পারে। এটা জন্মগত, নির্দিষ্ট কোনও অসুখ থেকে, আঘাত লেগে হতে পারে। এই রোগের চিকিৎসা রয়েছে। 
অনেক ক্ষেত্রে শুধুমাত্র চোখের পাওয়ার থেকেই চোখ ট্যাঁরা হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে সঠিক পাওয়ার দিলেই চোখ ঠিক হয়। আবার দরকারে সার্জারি পর্যন্ত করা যেতে পারে। 
 আঘাত থেকে চোখে কী কী সমস্যা হতে পারে?
 অল্পবয়সিদের মধ্যে চোট-আঘাত থেকে চোখের সমস্যা হওয়ার ঘটনা অপেক্ষাকৃত বেশি। অনেকসময় একদম ছোট বাচ্চাদের ব্রেস্টফিডিং করানোর সময় মায়ের পোশাকের হুক বাচ্চার চোখে লেগে যায়। একটু বড় বয়সে খেলতে গিয়ে, পেনসিল-পেনের আঘাত ইত্যাদি কারণে চোখে আঘাত লাগে। এক্ষেত্রে আঘাতের বিভিন্ন ধরন থাকতে পারে। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসার আওতায় আসতে হবে। 
 চোখের ইনফেকশন কতটা সমস্যার?
 সাধারণত চোখের ইনফেকশন বলতে কনজাংটিভাইটিস। চলতি ভাষায় এই সমস্যাকে জয়-বাংলা বলে। এই সমস্যা সাধারণত তেমন কোনও গুরুতর জটিলতা তৈরি করে না। তবে চোখ লাল মানেই কনজাংটিভাইটিস নয়। কী কারণে চোখ লাল হয়েছে, এটা বোঝা কঠিন। সেক্ষেত্রে চোখের যে কোনও সমস্যায় প্রথমেই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নেওয়া উচিত। 
 কম্পিউটার বা মোবাইল ব্যবহারের সময় কী সতর্কতা নিতে হবে?
 মোবাইল ব্যবহার যতটা সম্ভব কম করা দরকার। চোখে খুব বড় সমস্যা না থাকলে কম্পিউটারে কাজ করার সময় আলাদাভাবে কোনও প্রোটেকটিভ গ্লাস পরার দরকার নেই। শুধু সময়ান্তরে ব্রেক নেবেন। পারলে চোখ ঠান্ডা-পরিষ্কার জলে ধুয়ে নিন। এছাড়া চোখের আর্দ্রতা ধরে রাখতে মাঝেমাঝে চোখ বারবার খোলাবন্ধ করতে হবে। এটাকে ব্লিংকিং এক্সারসাইজ বলে। 
 চোখের যত্নে কী করা উচিত?
 প্রথমত, জন্মের পর পরই প্রথম বারের জন্য চোখের পরীক্ষা করা দরকার। এরপর বছর বছর চোখের পরীক্ষা চালিয়ে যেতে হবে। দ্বিতীয়ত, শোওয়ার ঘরের কোথাও একটি ক্যালেন্ডার টাঙিয়ে রাখুন। 
প্রতিদিন সকালে উঠে সেই ক্যালেন্ডারের দিকে এক চোখ বন্ধ করে তাকানো দরকার। দু’চোখের দৃষ্টির মধ্যে কোনও পার্থক্য নজরে পড়লেই চিকিৎসকের কাছে আসতে হবে। তৃতীয়ত, সকাল রাতে ঠান্ডা জলে চোখ ভালো করে ধুয়ে নেবেন।
লিখেছেন সায়ন নস্কর
06th  December, 201

Comments

Popular posts from this blog